আমাদেরবাংলাদেশ ডেস্ক।। পরিচালক- ইয়াসুজিরো ওজু। অসাধারণ বললেও কম হয়ে যায়, আমার দৃষ্টিতে এটা শুধু ‘টোকিও স্টোরি’ না এটা ‘ওয়ার্ল্ড স্টোরি’। ওজু এবং চিত্রনাট্যকার কগো নোদা ১০৩ দিনের মধ্যে স্ক্রিপ্টটি লিখেছিলেন। লিও ম্যাককারি পরিচালিত ১৯৩৭ সালের আমেরিকান চলচ্চিত্র “মেক ওয়ে ফর টুমোরো” এর উপর ভিত্তি করে ফিল্মের চিত্রনাট্য রচনা করা হয়েছিলো। ওজু একই কাস্ট এবং ক্রু সদস্যদের ব্যবহার করেছিলেন যাদের সাথে তিনি বছরের পর বছর ধরে কাজ করছিলেন। ১৯৫৩ সালে জাপানে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে, এটা অবিলম্বে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি এবং এটিকে জাপানি চলচ্চিত্র রফতানিকারকরা “খুব জাপানি” হিসেবে বিবেচনা করে বাইরে পাঠানোর ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হন।
এটি ১৯৫৭ সালে লন্ডনে প্রদর্শিত হয়েছিলো, যেখানে পরের বছর এটি উদ্বোধনী সুদারল্যান্ড ট্রফি জিতেছিলো এবং ১৯৭২ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রদর্শনের পরে মার্কিন চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিলো। টোকিও স্টোরি ব্যাপকভাবে ওজুর মাস্টারপিস হিসাবে বিবেচিত হয় এবং প্রায়শই এটি সর্বকালের সেরা অন্যতম চলচ্চিত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সালে সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের চলচ্চিত্র পরিচালকদের জরিপে এটি সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলো।শাকিচি এবং টমি হীরায়ামা নামে এক অবসরপ্রাপ্ত দম্পতি তাদের মেয়ে কিয়োকোর সাথে (যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা) দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের ওনোমিচি শহরে বাস করেন।
এই দম্পতি তাদের ছেলে, কন্যা এবং বিধবা পুত্রবধূকে দেখতে টোকিও ভ্রমণ করলেন। তাদের বড় ছেলে কচি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং তাদের বড় মেতে শিজ একটা হেয়ারড্রেসিং সেলুন চালায়। এদিকে বিধবা পুত্রবধূ নরিকো তার ব্যস্ত অফিসের চাকরী থেকে শাকিচি এবং টমিকে মেট্রোপলিটন টোকিও ঘুরে দেখানোর জন্য সময় নেন। ফিল্মের ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায় শাকিচি আর টমির সন্তানেরা ক্রমাগত তাদের পিতামাতাকে অবহেলা করলেও নরিকো ক্রমাগত তাদেরকে কাছে মায়া মমতায় কাছে টেনে নেন। এভাবে ঘটনা, দুর্ঘটনায় এগোতে থাকে ফিল্মের গল্প।ছবিটা আমাদের জীবনের ঘটনাগুলোরই প্রতিনিধিত্ব করে। জীবন চালনার তাগিদে আমরা অনেকেই আছে পরিবার থেকে দূরে আছি।
কতটা মনে বা স্মরণে রাখতে পারি নিজের নিকটাত্মীয়, রক্তের মানুষদের? ছবির শেষের দিকে নরিকো তার ননদকে এই প্রশ্নটার একটা উত্তর দিয়েছিলেন যে সবারই নিজের জীবন চালানোর অধিকার আছে আর বাবা-মা ও বাচ্চাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব সৃষ্টি এক হিসেবে অনিবার্য। ফিল্মের অভূতপূর্ব দারুণ মেকিং আর ওজুর চিরায়ত একই অ্যাঙ্গেলে সব শট নেয়া আমাদের এক ইনোভেটিভ ফিল্মি স্টাইল সম্পর্কে জ্ঞাত করবে।
©Asif Tanzim